চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার পর সবার কাছ থেকে একটি প্রশ্ন বারবার শুনে আসছি, “চুল পড়া কমাবো কি করে?”
সেটি নিয়ে লিখতে এই প্রশ্ন নয়, এই প্রশ্ন চুল পড়া সম্পর্কিত কয়েকটি ভুল ধারণা কাটাতে (busting hair myths):
শ্যাম্পু করলে চুল বেশি ওঠে।🚫
- শ্যাম্পু করলে যে চুলগুলি ওঠে সেগুলি তখন মাথা থেকে ছিঁড়ে আসেনা।
- চুল পড়ার আগে ৩ মাসের একটি বিশ্রামের স্টেজে থাকে, তার নাম টেলোজেন (telogen)। শ্যাম্পু করলে যে চুল হাতে উঠে আসে, তার পড়ার ভাগ্য ৩ মাস আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে-আপনার ৫ মিনিট মনের আনন্দে মাথা ঘষার দোষে না।
- টেলোজেন চুল চিনতে গোড়ার দিকটা লক্ষ্য করবেন। রুটের কাছটা পাতলা হয়ে আসে।
মাথায় বেশি তেল ঘষলে বেশি চুল গজাবে।🚫
- আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষের ত্বক তৈলাক্ত। তাই আমাদের মাথার ত্বকও তৈলাক্ত। তাতে বাইরে থেকে অতিরিক্ত তেল ঘষার প্রয়োজন সাধারণতঃ পড়ে না।
- শুষ্ক লাগলে সপ্তাহে ১-২ বার তেল যথেষ্ট। সুগন্ধি তেলের উপাদান মাথার ত্বককে ইরিটেট করতে পারে। নারকেল তেল যা শীতকালে জমে যায়, সেটা সবচেয়ে ভালো।
খুশকি শুষ্কতার লক্ষণ, মাথা নোংরা হওয়ার লক্ষণ।🚫
- খুশকি হয় ফাঙ্গাস মাথার ত্বককে ইরিটেট করে বলে। এর সঙ্গে শুষ্কতার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বেশি খুশকি হলে মাথায় বেশি তেল ঘষবেন না, তেল দিলে ওই ফাঙ্গাসগুলি আরো বেশি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
- খুশকি মাথার নোংরা না, ত্বকের টুকরো মাত্র। বারবার মাথা না ধুয়ে উপযুক্ত ওষুধ করা প্রয়োজন।
- খুশকি চিরতরে দূর হয়না। বারবার ফিরে আসতে পারে।
মাথায় নতুন চুল গজানো সম্ভব।🚫
- আগে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছি মাথায় নতুন চুল গজানো সম্ভব না কারণ মাথায় হেয়ার ফলিকলের সংখ্যা জন্ম থেকে নির্দিষ্ট। চুলগুলির বৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু সংখ্যা না।
- চুলের লম্বা হওয়া জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ছোটবেলা থেকে চুল লম্বা না হলে কোনো ওষুধ বা তেল দিয়ে লম্বা করা যায়না। চুলের বাড়ন্ত স্টেজকে বলে অ্যানাজেন (anagen)। এই স্টেজটি লম্বা হলে চুল লম্বা হয়, এবং এটি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
রোজ চুলে জল দেওয়া ভালো না।🚫
-
- যতবার ইচ্ছে চুল ধুতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই। বেশি তৈলাক্ত চুল বেশি নোংরা হয়, রোজ শ্যাম্পু করতে পারেন
সাদা চুল কালো করা যায়।🚫
-
- চুল সাদা হয়ে যাওয়াও জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কোন পেটের সমস্যার জন্য তাড়াতাড়ি চুল পাকেনা, তাই কোনো চিকিৎসার মাধ্যমে চুল কালো করা যায়না। কিছু ওষুধ সাময়িক ফল দিয়েছে, তাও অল্প কিছু ক্ষেত্রে। চুল রং করা একমাত্র সমাধান।
বারবার চুল আঁচড়ালে রক্ত চলাচল বেড়ে চুলের বৃদ্ধি হবে।🚫
-
- দিনে ২-৩ বার মাথার ত্বকে চিরুনি বোলালে যথেষ্ট স্টিমুলেশন দেওয়া হয়। এর বেশি বারবার ইরিটেট করলে চুল বাড়ার বদলে পড়ে যাবে।
চুল কাটলে/ন্যাড়া হলে বেশি চুল আসবে, চুল পড়া কমবে।🚫
-
- চুল কাটা বা কামিয়ে ফেলার সঙ্গে চুল বাড়ার সম্পর্ক নেই, কারণ চুল সৃষ্টি হয় স্টেম সেল থেকে, তা ত্বকের নিচে থাকে। ত্বকের উপরের মৃত ভাগটি কেটে কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করালে মাথায় অনেক নতুন চুল হবে।🚫
- টিভিতে সব সেলিব্রিটিদের ট্রান্সপ্লান্টের কাহিনী শুনে মনে হয় যেন জাদুর মতো-রাতারাতি মাথায় অনেক চুল এসে যায়।
- আসলে ট্রান্সপ্লান্ট করে মাথার পিছন দিকে ঘন চুলের জায়গা থেকে কিছু চুল তুলে সামনে ফাঁকা জায়গায় বসিয়ে দেয়া হয়। পিছন দিকে চুল যতটা পাতলা হয়, সামনে সেই পরিমান ঘনত্ব বাড়ে, পুরো মাথা সমান ঘন হয়ে যায় (redistribution of follicles)।
চুল রং করলে চুলের কোনো ক্ষতি হয়না।🚫
- বাড়িতে মা-কাকিমারা যেভাবে চুল রং করেন, অর্থাৎ চুলের উপর সরাসরি রং লাগান, এবং কয়েকবার শ্যাম্পু করার পর সে রং ধুয়ে যায়, এতে চুল খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করা কিন্তু অবশ্যই প্রয়োজন এবং সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু এই ধরণের রং করা চুলের জন্য ভালো।
- পার্লারে গিয়ে ব্লিচ করে চুলের রং সরিয়ে নতুন করে যে পার্মানেন্ট রং দেওয়া হয়, তাতে চুল ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালার প্রটেকশন শ্যাম্পু যা পার্লার থেকে দেয় তা ব্যবহার করেও চুলের ঘনত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। পরবর্তী কালে যে নতুন চুল ওঠে তা পাতলা এবং দুর্বল হয়ে যায়।
- ডাই করার ক্ষেত্রে আরো একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে তা হলো স্ক্যাল্পে ডাই জমে চুলের ফলিকলগুলোর ক্ষতি করে। একে বলে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ। তাই বাড়িতে হোক আর পার্লারে, নিয়মিত ডিপ ক্লিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা খুব জরুরি।
মাইক্রোস্কোপের তলায় টেলোজেন (যা পড়ে যাবে) ও অ্যানাজেন (যা বাড়ছে) চুল।